প্রকল্প সমূহ

আইনি সিদ্ধান্তের ডিজিটাইজেশন
জলমগ্ন জমি আবাদযোগ্যকরণ পদ্ধতি

নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিবেশ বান্ধব বায়োলজিক্যাল সোলার সিস্টেম


নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সিলিকন সোলার প্যানেল বাংলাদেশে বর্তমানে সহজলভ্য। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে প্রযুক্তিটির উপর বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এই প্যানেলের উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি উৎপন্ন করা সেভাবে সম্ভব হচ্ছে না। প্রস্তাবিত বায়ো-সোলার সিস্টেমটি বাস্তবায়ন করা হলে তা গবেষণা, বাণিজ্য ও নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নতুন সম্ভবনার দ্বার উন্মোচিত করবে। বাংলাদেশে কার্বন ভিত্তিক জ্বালানির সীমিত মজুত অনেকটা ধরে রাখা সম্ভব হবে।

চিহ্নিত সমস্যা এবং প্রস্তাবিত সমাধান

নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সিলিকন সোলার প্যানেল বাংলাদেশে বর্তমানে সহজলভ্য এবং সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে প্রযুক্তিটির উপর বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তিটির কিছু অসুবিধা হলঃ ১।সিলিকন সোলার প্যানেলের মূল উপাদান সিলিকন বিশুদ্ধকরণের জন্য বাংলাদেশে এখনও কোন ফ্যাক্টরি নেই। ফলে সিলিকন প্যানেল সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর পণ্য। ২।বাংলাদেশে প্রতি ওয়াট সিলিকন সোলার প্যানেলের দাম পড়ে ৪৭-৫৬ টাকা। অর্থাৎ ১০০ ওয়াট সোলার প্যানেলের দাম পড়ে ৪৭০০-৫৬০০ টাকা এবং এতে ১০০ ওয়াটের একটি লাইট বাল্ব সূর্যোজ্জ্বল দিনে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা জ্বালানো সম্ভব। উল্লেখ্য যে ১০০ ওয়াট বিদ্যুতের জন্য ৪৭০০-৫৬০০ টাকা বিনিয়োগ সাধারণ মানুষের জন্য অতীব ব্যয়বহুল। ৩।সিলিকন বিশুদ্ধকরণের জন্য জ্বালানি হিসাবে পেট্রোলিয়াম অথবা কয়লা ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে কার্বন ভিত্তিক জ্বালানির মজুত সীমিত; ফলে সিলিকনের দেশীয় উৎপাদন শুরু হলেও জ্বালানির সীমাবদ্ধতার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। ৪।সিলিকন সোলার প্যানেলের উপাদান হিসাবে সিলিকন ছাড়া গ্যালিয়াম, আর্সেনিক, ইনডিয়াম, ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি ধাতু ব্যবহার করা হয়; যা মেয়াদ শেষে খোলা পরিবেশে অবমুক্ত করা হলে তা জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর হবে। মেয়াদ শেষে এসব প্যানেল প্রক্রিয়াজাত করার জন্য এখনও কোন পরিকল্পিত অবকাঠামো বাংলাদেশে নেই। ৫। জাতিসংঘের ২০১২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০৮৫ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে ১৪০০ কোটি যা ২০১১ সালের পৃথিবীর জনসংখ্যার দ্বিগুণ। আবার হাবার্টের তত্ত্ব মোতাবেক ২০৮৫ সালে পেট্রোলিয়াম উৎপাদন হবে ১৯২৫ সালের সমান। অতএব ভবিষ্যতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পেট্রোলিয়ামের উৎপাদন কমার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সিলিকন সোলার প্যানেলের দাম বৃদ্ধি পাবে।

নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী বায়োলজিক্যাল সোলার প্যানেল বিভিন্ন জীবপদার্থের মাধ্যমে সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে। বর্তমানে বেশ কিছু ইউরোপিয়ান, আমেরিকান এবং জাপানিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও কোম্পানি হাইড্রোজেন অথবা ইথানল ফুয়েল সেল ভিত্তিক বায়ো-সোলার প্যানেলের উপর কাজ করছে। প্রস্তাবিত সোলার প্যানেলটি ইথানল ফুয়েল সেল ভিত্তিক এবং এটি সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে তরল জ্বালানি তৈরি করে ও একই সাথে তা সংরক্ষণ করে; যা পরবর্তীতে ফুয়েল সেলের মাধ্যমে চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সিস্টেমটি উদ্ভিদের ন্যায় সালোকসংশ্লেষণ নির্ভর হওয়ায় এর কার্যকারিতা সূর্যের আলোর উপর নির্ভরশীল কিন্তু সরাসরি সূর্যের অবস্থানের উপর নির্ভরশীল নয় বিধায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সিস্টেমটি বেশ উপযোগী হবে। প্রস্তাবিত বায়ো-সোলার সিস্টেমটি বাস্তবায়ন করা হলে তা গবেষণা, বাণিজ্য ও নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নতুন সম্ভবনার দ্বার উন্মোচিত করবে। বায়ো-সোলার প্যানেলটির কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হবেঃ ১। পরিবেশবান্ধব জীবপদার্থ যেমন জিলাটিন, ইস্ট, স্পিরুলিনা ইত্যাদির সাহায্যে প্যানেলটি তৈরি করা ২। ১ বর্গ মিটার প্যানেল হতে প্রতিদিন ১.৮ – ২.৭ ইউনিট ব্যবহারযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা ৩। দেশীয় উৎস হতে কাঁচামাল সংগ্রহ করে প্যানেলটির উৎপাদন খরচ প্রতি ওয়াটে কমিয়ে ৫ টাকার নিচে নিয়ে আসা ৫। প্যানেলটিকে একই সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ও স্টোরেজ ব্যাটারির মত কাজ করানো ৬। পূর্ণাঙ্গ প্যানেলটির স্থায়ীত্ব ১ বছরে উত্তীর্ণ করা ৭। সহজে বহনযোগ্য ও স্থাপনযোগ্য করা ৮। প্রতিকূল পরিবেশ যেমন ঝড়, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, ঝড়োবাতাস, কুয়াসা ইত্যাদি প্রতিরোধী করে তোলা ৯। প্যানেলটির উপাদানসমূহ পরিবেশবান্ধব হওয়ায় মেয়াদ শেষে প্যানেলটিকে প্রাকৃতিকভাবে নিষ্পত্তিযোগ্য করা ১০। ২২০ ভোল্ট এ.সি. বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য একটি সিস্টেম বানানো যাতে বায়োলজিক্যাল সোলার প্যানেলের সাথে ইথানল ফুয়েল সেল ও ইনভার্টার ব্যবহার করা হবে ১১। প্রযুক্তিটি সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগী করে সর্বসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা যাবে।